ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়

ফ্যাটি লিভার (Fatty Liver) বা লিভারে চর্বি জমা হওয়া একটি নীরব প্রাণঘাতী রোগ। এটি সাধারণত অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা(Unhealthy Lifestyle), অতিরিক্ত ওজন(Over Weight), এবং অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে এই রোগটি লক্ষণহীন হলেও, এটি লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো গুরুতর সমস্যায় রূপ নিতে পারে। একারণে একে নীরব প্রাণঘাতী রোগ বলা হয়ে থাকে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে সঠিক জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এর প্রতিরোধ সম্ভব।

ফ্যাটি লিভার কি

ফ্যাটি লিভার (Fatty Liver) হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে লিভারের কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। স্বাভাবিকভাবে লিভারে সামান্য চর্বি থাকে, কিন্তু যখন লিভারে এই চর্বির পরিমাণ ৫% বা তার বেশি হয়ে যায়, তখন একে ফ্যাটি লিভার (Fatty Liver) বলে। যা মূলত দুই ধরনের হতে পারে—অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, যা অতিরিক্ত মদ্যপান বা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়।

ফ্যাটি লিভার কয় ধরণের হয়ে থাকে?

ফ্যাটি লিভার ২ প্রকার। যথাঃ
১) অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (Alcoholic Fatty Liver)
২) নন -অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার
(Non-Alcoholic Fatty Liver)

অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (Alcoholic Fatty Liver):

অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (Alcoholic Fatty Liver) হলো লিভারের একটি অবস্থা, যা অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে হয়। অ্যালকোহল লিভারে মেটাবোলাইজ হওয়ার সময় অতিরিক্ত চর্বি জমে, ফলে লিভারের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস ও সিরোসিসের মতো গুরুতর লিভারের রোগের দিকে এটি ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে পারে।

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (Non-Alcoholic Fatty Liver):

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে (Non-Alcoholic Fatty Liver)লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয় কিন্তু তা অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে নয়। এটি সাধারণত অতিরিক্ত ওজন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, ও ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে হয়ে থাকে। নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো-হেপাটাইটিস (NASH) এর ফলে লিভার সিরোসিস বা লিভার ফেইলিওরের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

ফ্যাটি লিভার রোগের লক্ষণ

ফ্যাটি লিভারকে “নীরব রোগ” বলা হয় কারণ প্রাথমিক অবস্থায় এর কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। যখন কিছু লক্ষণ দেখা দেয় ততদিনে অবস্থার অবনতি হয়ে পড়ে। এতে নিন্মলিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

১) অবসাদ ও ক্লান্তি: শরীরে শক্তির অভাব এবং অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভূত হয়।
২)পেটের ডানদিকে ব্যথা: লিভারের স্থানীয় অঞ্চলে অসুবিধা বা ব্যথা হতে পারে।
৩) ওজন কমে যাওয়া: অযৌক্তিকভাবে ওজন হ্রাস হওয়া।
৪) পেট ফাঁপা বা ভার অনুভব করা: পেট ভারী বা ফোলা অনুভব হতে পারে।
৫) চামড়া বা চোখের সাদা অংশ হলুদ হওয়া (জন্ডিস): লিভারের গুরুতর সমস্যায় এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৬) বমি বমি ভাব বা খেতে ইচ্ছা না হওয়া: মাঝে মাঝে এমন অনুভূতি হতে পারে।
যদিও এসব লক্ষণ অন্যান্য রোগের সাথে মিলতে পারে, তবে ফ্যাটি লিভার শনাক্ত করতে ডাক্তারি পরীক্ষা জরুরি।

ফ্যাটি লিভার রোগের কারণঃ

ফ্যাটি লিভারের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যা মূলত জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, এবং শারীরিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত। ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণগুলো হলো:

১.অতিরিক্ত ওজন:

অতিরিক্ত ওজন বিশেষ করে পেটের আশেপাশে জমা চর্বি, লিভারে চর্বি জমার প্রধান কারণ। স্থূলতা লিভারে চর্বি জমতে সাহায্য করে এবং ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়।

২.অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:

ফাস্ট ফুড, প্রসেসড ফুড, অতিরিক্ত চিনি এবং ট্রান্স ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার লিভারে চর্বি জমাতে সহায়ক। বিশেষ করে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এবং অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার ফ্যাটি লিভারের অন্যতম কারণ।

৩.অ্যালকোহল গ্রহণ:

অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন লিভারের কোষের ক্ষতি করে এবং এতে চর্বি জমা শুরু হয়। অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ হলো অতিরিক্ত মদ্যপান।

৪.ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স:

টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে লিভারের চর্বি জমার ঝুঁকি বেশি। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স লিভারের কোষে চর্বি জমাতে সাহায্য করে।

৫.উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড:

রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ থাকলে লিভারে চর্বি জমা হতে পারে।

৬.অন্য রোগ বা অবস্থা:

মেটাবলিক সিন্ড্রোম, উচ্চ রক্তচাপ, এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS) ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৭.অল্প শারীরিক পরিশ্রম:

শারীরিক পরিশ্রমের অভাব বা দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা লিভারে চর্বি জমার অন্যতম কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে শরীরে মেটাবলিজম কমে যায়, যা ফ্যাট জমাতে সহায়ক হয়।

৮.জেনেটিক বা বংশগত কারণ:

ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে বংশগত প্রভাব থাকতে পারে। যদি পরিবারে লিভারের রোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে এর ঝুঁকি বেশি হয়।

৯.দ্রুত ওজন কমানো:

খুব দ্রুত ওজন কমানোর ফলে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে পারে। অনেক সময় শরীরে মেটাবলিজমের পরিবর্তনের কারণে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায়, যা চর্বি জমাতে সহায়ক হয়।

১০.ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

কিছু ওষুধ, যেমন স্টেরয়েড, টেট্রাসাইক্লিন অ্যান্টিবায়োটিক, এবং কিছু ক্যান্সারের ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে এবং ফ্যাট জমাতে পারে।


এইসব কারণগুলো ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই প্রতিরোধে জীবনধারার পরিবর্তন এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি।

কারা রয়েছে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে

ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট জীবনযাপন, শারীরিক অবস্থা, এবং স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে এই রোগের প্রবণতায় থাকে। যেসব ব্যক্তিরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন তারা হলেন:

১.অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা থাকা ব্যক্তিরা:

বিশেষ করে পেটের অংশে বেশি চর্বি জমা হলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেশি থাকে।

২.ডায়াবেটিস রোগী:

টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে লিভারে চর্বি জমার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৩.উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা:

উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। একইসাথে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

৪.অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনকারী:

যারা নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ করেন, তাদের লিভারে চর্বি জমার ঝুঁকি বেশি। বিশেষত অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের জন্য এরা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।

৫.মেটাবলিক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা:

মেটাবলিক সিন্ড্রোমে থাকা মানুষদের মধ্যে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ওজনজনিত সমস্যা থাকে, যা ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৬.অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা:

যারা অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, চর্বিজাতীয় ও চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন এবং শারীরিক ব্যায়াম করেন না, তাদের ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেশি।

৭.বয়স্ক ব্যক্তিরা:

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে এই ঝুঁকি বাড়ে।

৮.পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS) থাকা নারী:

PCOS আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেশি থাকে, কারণ তাদের শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের প্রবণতা থাকে।

৯.হেপাটাইটিস সি রোগী:

হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে লিভারের ফ্যাট জমার ঝুঁকি বেশি থাকে।

১০.অল্প ঘুম ও মানসিক চাপের শিকার ব্যক্তিরা:

ঘুমের অভাব ও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ লিভারের ফ্যাট জমা করতে সহায়ক হতে পারে।
এইসব ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারেন।

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়

ফ্যাটি লিভার আমাদের দেশে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্বাস্থ্য সচেতন যেকোন ব্যাক্তি ফ্যাটি লিভার থেকে পরিত্উরাণেরপায় খুজে থাকেন। ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচার জন্য জীবনধারার পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, কারণ এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। এর চিকিৎসার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:

ওজন কমানো: নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্যের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওজন কমানো ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ। ৫-১০% ওজন কমানো লিভারের চর্বি হ্রাস করতে সহায়ক। সুতরাং ওজন কমানোয় নিহিত রয়েছে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়।

সুষম খাদ্যাভ্যাস: বেশি পরিমাণে ফল, শাকসবজি, সম্পূর্ণ শস্য এবং লো-ফ্যাট খাবার খাওয়া জরুরি। চর্বিজাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

অ্যালকোহল পরিহার করা: অ্যালকোহল গ্রহণ ফ্যাটি লিভারের অবস্থা খারাপ করতে পারে, তাই এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা অন্যান্য শারীরিক ব্যায়াম করলে লিভারের চর্বি কমতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ওষুধ ও পরামর্শ: বিশেষ কিছু ওষুধ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হতে পারে, যেমন ইনসুলিন প্রতিরোধ কমানোর ওষুধ বা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

যথাযথভাবে জীবনধারার পরিবর্তন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত

লিভারের ফ্যাট কমাতে কিছু নির্দিষ্ট খাবার কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এগুলো লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং চর্বি কমাতে সহায়ক। কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো:

১.ফল ও সবজি: শাকসবজি, যেমন পালং শাক, ব্রোকলি, এবং ফল যেমন আপেল, বেরি, কমলা, লিভারের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। এদের মধ্যে থাকা ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের কার্যক্রম উন্নত করে।

২.ওটস ও সম্পূর্ণ শস্য: ওটমিল এবং অন্যান্য সম্পূর্ণ শস্যে (whole grains) উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা শরীরের ফ্যাট কমাতে সহায়ক।

৩.ফ্যাটি মাছ: স্যামন, ম্যাকারেল, এবং সার্ডিনের মতো ফ্যাটি মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড লিভারের ফ্যাট হ্রাস করতে সহায়ক।

৪.অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েলে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট লিভারের চর্বি কমাতে সহায়তা করে এবং প্রদাহ কমায়।

৫.রসুন: রসুন ফ্যাটি লিভারের জন্য উপকারী, কারণ এটি ওজন কমাতে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

৬.বাদাম: বিশেষত আখরোট ও আমন্ডের মতো বাদাম লিভারের ফ্যাট কমাতে সহায়ক। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের সুরক্ষা দেয়।

৭.সবুজ চা: সবুজ চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা লিভারের ফ্যাট কমাতে সহায়ক হতে পারে এবং প্রদাহ হ্রাস করে।

৮.অ্যাভোকাডো: এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফাইবার লিভারের ফ্যাট কমাতে কার্যকর।
এই ধরনের খাবার নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে।

ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া যাবে না?


ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে কিছু খাবার লিভারের চর্বি বাড়িয়ে রোগকে আরও খারাপ করতে পারে। এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত:

১.প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Foods):
প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন চিপস, ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, এবং ফ্রোজেন মিলে অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং ক্ষতিকর চর্বি থাকে, যা লিভারের চর্বি বাড়ায়।

২.চিনি ও মিষ্টি (Sugar and Sweets):
অতিরিক্ত চিনি, বিশেষত ফ্রুক্টোজ বা হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ যুক্ত পানীয় বা খাবার লিভারের চর্বি জমাতে পারে। মিষ্টি পানীয়, সোডা, ডেজার্ট, মিষ্টি জাতীয় খাবার এসব এড়িয়ে চলা উচিত।

৩.পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট (Refined Carbohydrates):
সাদা রুটি, পাস্তা, পিৎজা, এবং বেকড পণ্য (যেমন কেক, কুকিজ) পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটে পরিপূর্ণ। এগুলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায় এবং লিভারের চর্বি বাড়াতে সাহায্য করে।

৪.ফাস্ট ফুড এবং ভাজাপোড়া খাবার (Fast Food and Fried Foods):
ফাস্ট ফুড, ডিপ ফ্রাইড খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবারে ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা লিভারের ক্ষতি করে এবং ফ্যাট জমতে সাহায্য করে।

৫.অ্যালকোহল (Alcohol):
অ্যালকোহল লিভারের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর, কারণ এটি লিভারের কোষের ক্ষতি করে এবং চর্বি জমার কারণ হয়। তাই ফ্যাটি লিভারের রোগীদের অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা উচিত।

৬.বেশি ফ্যাটযুক্ত লাল মাংস (High-Fat Red Meat):
বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত মাংস, বিশেষত গরু এবং ভেড়ার মাংস, লিভারের চর্বি বাড়াতে সহায়ক। এটি লিভারের প্রদাহ বাড়ায়।

৭.প্যাকেটজাত ফলের রস (Packaged Fruit Juices):
অনেক প্যাকেটজাত ফলের রসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা লিভারের চর্বি বাড়ায়। তাই এসব পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।

এই ধরনের খাবারগুলি ফ্যাটি লিভারের রোগকে আরও খারাপ করতে পারে, তাই এগুলো খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত।

পরিসংখ্যান:

রোগীর সংখ্যা: বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভার রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় ১৫-২৫% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।
বয়সের উপর ভিত্তি করে: ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে: পুরুষদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি সাধারণত বেশি।

ঝুঁকি ফ্যাক্টর:
স্থূলতা: বাংলাদেশের ৩০% জনগণ স্থূলতা সমস্যায় ভুগছে।
ডায়াবেটিস: ১০-১৫% মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস রয়েছে, যা ফ্যাটি লিভারের সম্ভাবনা বাড়ায়।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: বেশি তেল, চিনি এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা।

FAQ:

আরও পড়ুনঃ ভিটামিন সি এর অভাবে কি হয়?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top