ভিটামিন সি: এর অভাবে কি হয় এবং উৎস
ভিটামিন সি এর অভাবে কি হয়: ভিটামিন সি (Vitamin C) আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এটি আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য নানা রকম উপকারি। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে ভিটামিন সি এর অভাব হলে শরীরের উপর কি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। আজ আমরা আলোচনা করব ভিটামিন সি এর অভাবে কি হয় এবং ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কি কি।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২-৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৩০-৪০% ভিটামিন সি এর ঘাটতিতে রয়েছে। (Source: Bangladesh Journal of Medicine)। বৃদ্ধদের মধ্যে পুষ্টির অভাবের কারণে ভিটামিন সি এর ঘাটতি লক্ষণীয়। তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন ও পুষ্টির অভাবের কারণে ভিটামিন সি এর অভাব বেশি দেখা যায়। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমাদের জানা দরকার ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কোনগুলো। পুষ্টিবিদদের মতে বয়ষ্কলোকদের প্রতিদিন ৪৫ মিলিগ্রাম ও বাচ্চাদের ৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি গ্রহণ করা উচিত।
ভিটামিন সি কি?
ভিটামিন সি, যা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড নামে পরিচিত, একটি জলীয় দ্রাবক ভিটামিন। এটি আমাদের শরীরে কোষের ক্ষতি রোধ করে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আয়রন শোষণে সহায়ক।
ভিটামিন সি এর অভাবে কি হয়?
গবেষণায় দেখা যায় যে, বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও বয়সী মানুষের মাঝে ভিটামিন সি এর অভাব ও উৎস নিয়ে জানার আগ্রহ আছে। তাই আমরা ভিটামিন সি এর অভাবে কি কি অসুবিধা হয় সেসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছি।
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এটি আমাদের ইমিউন সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর অভাব হলে সহজে সর্দি, জ্বর, Flu ইত্যাদি অসুখ হতে পারে।
২. ত্বক ও চুলের সমস্যা
ভিটামিন সি ত্বককে মসৃণ ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। এর অভাবে ত্বকে শুষ্কতা, দাগ এবং কুঁচকে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও চুল পড়ার অন্যতম কারণ ভিটামিন সি এর অভাব।
৩. আয়রনের অভাব
ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সহায়তা করে। তাই, ভিটামিন সি এর অভাবে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা অ্যানিমিয়া (রক্তাল্পতা) সৃষ্টি করতে পারে।
৪. ক্ষত সঠিকভাবে সারেনা
ভিটামিন সি মাংসপেশি এবং টিস্যুর পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এর অভাবে শরীরের ক্ষত সারতে সময় নেয়। পাশাপাশি এটি শরীরের কোষগুলোকে মেরামত করতে সাহায্য করে।
৫. মানসিক স্বাস্থ্য
ভিটামিন সি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে উদ্বেগ এবং অবসাদের সমস্যা বাড়তে পারে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কি কি?
এখন চলুন দেখি, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কোনগুলো এবং ভিটামিন সি জাতীয় কোন খাবারগুলো খুব সহজে আমাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় খুব সহজে রাখতে পারি। আমাদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
১. ফলমূল
• লেবুঃ দেশীয় খাবারের মাঝে লেবু ভিটামিন সি এর সহজলভ্য উৎস।
• পেয়ারাঃ দেশীয় খাবারের মাঝে পেয়ারা ভিটামিন সি এর গুরুত্ব পূর্ণ উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। দেশীয় ফলের মধ্যে ভিটামিন সি অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ ও এটি সহজপ্রাপ্য।
• কমলালেবু: এটি ভিটামিন সি-র একটি প্রধান উৎস। একটি মাঝারি কমলালেবুতে ৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
• স্ট্রবেরি: এক কাপ স্ট্রবেরিতে ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।
• কিউই: একটি কিউইতে ৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
*এছাড়া পাকা পেঁপে, আম,কালজাম, আমড়া এসব দেশীয় ফলমূলও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম পেঁপে তে ৫৭ মিলিগ্রাম, আমে ৪১ মিলিগ্রাম, কালোজামে ৬০ মিলিগ্রাম ও আমড়াতে ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
২. শাকসবজি
• শিমলা মরিচ: এটি ভিটামিন সি এর অন্যতম প্রধান উৎস। একটি মাঝারি শিমলা মরিচে ১২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।
• ব্রোকলি: এতে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
• কাঁচা পেঁপে: এতে ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
৩. অন্যান্য উৎস
• টমেটো: টমেটোর মধ্যে ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে, যা দৈনন্দিন প্রয়োজনের একটি অংশ পূরণ করে।
• জোয়ান: এতে ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি এর দৈনিক প্রয়োজনীয়তা
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভিটামিন সি এর দৈনিক প্রয়োজনীয়তা প্রায় ৬৫ থেকে ৯৫ মিলিগ্রাম। শিশুদের জন্য এই পরিমাণ কিছুটা কম।
উপসংহার
ভিটামিন সি একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। এর অভাবে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই, আমাদের উচিত সঠিক খাদ্য গ্রহণ করে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করা। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সঠিক পুষ্টির মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সজীব রাখতে পারি।
ভিটামিন সি এর স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোকে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনাকে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব এবং এর অভাবের ফলে হওয়া সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করবে।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি?